গাজীপুর প্রতিনিধি: বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) গাজীপুর বোর্ড বাজারের প্রধান শাখার রেজিস্ট্রার ড.শফিকুল আলম ফ্যাসিবাদের অন্যতম দোসর ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতির দাপুটে পরিচয়ে অনিয়ম দূর্ণীতিতে বড় চমক দেখিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ উঠেছে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়ম দূর্ণীতির মাধ্যমে নিয়োগ- বদলি বাণিজ্য, আওয়ামী সখ্যতা, টাকার বিনিময়ে ও. এস. ডি প্রত্যাহার করে অন্যত্র বদলি ও শাস্তিমূলক বদলির ব্যবস্থা করাসহ নানা প্রশাসনিক অনিয়ম দূর্ণীতি করেছেন তিনি।
উল্লেখ্য ৫ আগস্ট ২০২৪ থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত রেজিস্ট্রার ড. মোহা: শফিকুল আলম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি ও জামাত সমর্থিত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বাধার মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পারেননি। কিন্তু বর্তমান ট্রেজারার, মিডিয়া বিভাগের সিনিয়র ভিডিও স্পেশালিষ্ট জনাব সোহেল আহমেদ রেজিস্ট্রারকে বর্তমান উপাচার্য হিসেবে যোগদানের পর হতে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত করতে সহযোগিতা করছেন। এর উপহার স্বরুপ সোহেল আহমেদ উপাচার্যের কাছাকাছি থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহনে প্রভাব বিস্তার করছেন। সে প্রেক্ষিতে রেজিস্ট্রার বিএনপি ও জামাত সমর্থিত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উপর তার ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচারী আচরণ অব্যাহত রেখেছেন। বিষয়টি কোনোভাবেই যেনো কর্তৃপক্ষের নজরে তুলছেন না।
বর্তমান রেজিস্ট্রার ড.শফিকুল আলম নিজেকে মুক্তিযুদ্ধা সন্তান ও আওয়ামী সরকারের আস্থাভাজন হওয়ার জন্য পিতার মৃত্যুর ৫০ বছর পর পাবনা শহীদনগরের পাকুরিয়ার এক কবরাস্থানে তার পিতার কবর আবিস্কার করে সেখানে সাইনবোর্ড লাগিয়েছেন। ভণ্ডামিতে এ যেন সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর রচিত লালসালু উপন্যাসের মজিদের চরিত্রকেও হার মানায়।
৫ই আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ফ্যাসীবাদী স্বৈরাচারী সরকারের পতন হলেও গত ১৬ বছরে তৈরি হওয়া স্বৈরাচার ফ্যাসিবাদ গোষ্ঠীর অপতৎপরতা এখনো বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় রয়েছে। প্রশাসনের ভিতর ফ্যাসীবাদের দোসররা এখনো লুকিয়ে থেকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হবার চেষ্টায় মরিয়া। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করে তারা ফায়দা লোটার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের ভিতর লুকায়িত থাকা আওয়ামী লীগের দোসররা সমাজে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে।আর এবিষয়ে সর্বোচ্চ ভূমিকা পালন করে চলেছেন রেজিস্ট্রার ড.মোঃ শফিকুল আলম।পতিত স্বৈরাচারের দোসর খুনি শেখ হাসিনার আস্থাভাজন গাজীপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র মোঃ জাহাঙ্গীরের সাথে বর্তমান রেজিস্টার ড.মো: শফিকুল আলম
রেজিস্ট্রার শফিকুল তার নিজেস্ব চমকের বদৌলতে ইতোমধ্যে বাগিয়ে নিয়েছেন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি ও কর্মকর্তা সমিতির সভাপতির পদ। ভাইয়ের মেয়ের জামাই ছাত্রলীগ ক্যাডার মতিউর রহমানকে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিভাগে সহকারী প্রোগ্রামার হিসাবে, আপন বোন জামাই আবু বাকারকে আঞ্চলিক পরিচালক পদে নিয়োগ দেন। এই বাককারকে দিয়ে রেজিস্ট্রার রাজশাহীতে অবৈধ উপার্জনের টাকায় ডেভালপর বিজনেস গড়ে তুলেছেন। বাউবিতে রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে বিভিন্ন অপকর্ম দুর্নিতির আশ্রয় নিয়ে নিজের বোন জামাই আবু বাকারকে আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। এই বাকারের বিরুদ্ধে নারী কেলেংকারির অভিযোগ থাকলেও নিজ প্রভাবে তার সুষ্টু তদন্ত না করে অন্যত্র বদলি করে দায় সেরেছেন। নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে প্রচুর অর্থ উপার্জন করার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যে ঢাকার মোহাম্মদপুর, শ্যামলীতে কোটি টাকার ফ্ল্যাট ও গাজীপুরের বোর্ড বাজার ও ঝাজর এলাকায় নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকার জমি ক্রয় করেছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রায় ৪০-৪২জনকে স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নিয়ে চাকুরি দিয়েছেন তিনি। এ যেনো পরিণত হয়েছে পারিবারিক বিশ্ববিদ্যালয়ে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ‘জাতীয়তাবাদী’ আদর্শের বাউবির ট্রেজারার অধ্যাপক ড. আবুল হাসনাত মোহা. শামীম ও বাউবির বর্তমান রেজিস্ট্রার ড. মুহা শফিকূল আলম সম্পর্কে চাচা-ভাতিজা। চাচার মেয়েকে স্কুল অব এগ্রিকালচার এবং রুরাল ডেভেলপমেন্ট এ শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে সম্পর্ক জোরদার করার প্রকৃয়া করছেন। আর উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়কে পরিণত করছেন পারিবারিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। অনেক রক্ত আর জীবনের বিনিময়ে ফ্যাসিস্টমুক্ত বাংলাদেশে শুধুমাত্র আত্বীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার কারণে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ফ্যাসিস্ট এখনো মুক্ত হতে পারেনি। আর এই রেজিস্ট্রারের কথা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় সকল কাজ কর্ম চলে । এই ট্রেজারার এবং রেজিস্ট্রার উভয়ের গ্রামের বাড়ি একই জায়গায় চাঁপাইনবাবগঞ্জে। বিষয়টি সম্পর্কে সকলে অবগত হলেও বদলী/হয়রানির ভয়ে কেউ মুখ খুলছেন না।
সাবেক গাজীপুর জেলা আ’লীগের সভাপতি ও মুক্তিযদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেলের সাথে সখ্যতা করে বাগিয়ে নেন তার বাবার মুক্তিযদ্ধ সনদ।পরে আ ক ম মোজাম্মেলের মেয়ে মেহেরিন মুনজারিন রত্নাকে বাউবির ওপেন স্কুল এর সহযোগী প্রফেসর পদে চাকুরি দেয়ার ব্যবস্থা করে তার কিছুটা দায় শোধ করেন। ৫ আগষ্টের পর রত্না অদ্যাবধি কর্মস্থলে যোগ দেননি কিন্ত নিয়মিত বেতনের ব্যবস্থা অব্যাহত রাখছেন তিনি। ফ্যাসিস্টদের পূনর্বাসনের জন্য শেষ সময়েও নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন বৈষম্যের শিকার অনেকে। শুধুমাত্র গাজীপুর বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ৩৫২জন কর্মকর্তা কর্মচারীদের দুই তৃতীয়াংশ আওয়ামী পরিবারের পূনর্বাসনের ব্যবস্থা তিনি করেছেন। এ ক্ষেত্রে সর্বত্র ফ্যাসিবাদের দোসরদের নির্মুল করা হলেও বাউবি কর্তৃপক্ষ ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসন করছেন।
১৯৯৫ সালের মে মাসে বাউবিতে সহকারী পরিচালক হিসাবে যোগ দেয়ার সময় তার পিতা যে মুক্তিযোদ্ধা সে বিষয়টি সামনে আনেননি। অবশেষে ২০১৮ সালের মে মাসে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেলের জাদুর স্পর্শে মুক্তিযোদ্ধার সনদ ব্যবহার করে বাউবিতে রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন তিনি। যদিও তিনি দৈনিক বাংলাদেশ যুগান্তর কে জানান মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে কোন সুবিধা তিনি কখনো নেননি।
দূর্নীতিবাজ ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের সাথে বর্তমান বাউবির রেজিস্টার ড.মো: শফিকুল আলম
ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল ও গাজীপুর-২ আসনের সাবেক এমপি জাহিদ আহসান রাসেলের আস্থাভাজন গাজীপুরের শাহরিয়ার শাহানকে নিয়োগে যোগ্যতার ও অভিজ্ঞতার শর্ত পূরণ না হওয়ার পরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশলী পদে নিয়োগ দেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশলী পদে নিয়োগ দানের পর শাহরিয়ার শাহানকে নিজের ধর্মের ভাই বলে পরিচয় করে দিতেন তিনি। এ যেনো ধর্মের পরিচয়ে ফ্যাসিবাদ ছাড়ানো।
মিডিয়া বিভাগের সিনিয়র ভিডিও স্পেশালিষ্ট জনাব সোহেল আহমেদ পূর্বতন উপাচার্য ড. এম এ মান্নানের আস্থাভাজন ছিলেন। সে হিসেবে ২০১৮ সালে ড. শফিককে রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগে বিষয়ে ভূমিকা রাখেন। যার পুরস্কার হিসেবে ইন্টারমিডিয়েট পাশ জনাব সোহেলকে রেজিস্ট্রার তথ্য গোপন করে যুগ্ম-পরিচালক পদে পদন্নোতি প্রদান করেন। যা একজন অযোগ্যকে মাথায় উঠানোর পরিস্থিতি। অথচ যুগ্ম-পরিচালক পদে পদন্নোতির বিষয়ে ইউজিসির ব্যপক আপত্তি লক্ষনীয় ছিলো। অন্যদিকে অনেকেই এই রেজিস্ট্রারের সময় যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও চরম বৈষম্যের শিকার হয়েছেন।
প্রতিটা দুর্নীতিবাজ সাবে দুর্নীতিবাজদূর্নীতিবাজ সাবেক আইসিটি মন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকের সাথে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার ড.মোঃ শফিকুল আলম
ওপেন স্কুলের সহকারী অধ্যাপক ড. আদনান আরিফ সালিম। যিনি জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় হতে প্রত্নতত্ত্ব এর উপর স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তাকে শেখ রেহানার স্বামী শফিক সিদ্দিকীর সুপারিশে নিয়মবহির্ভূতভাবে ওপেন স্কুলের ইতিহাসের প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ নেন। নিয়োগের ক্ষেত্রে স্কুল কমিটির কোনো সুপারিশ নিতে হয়নি। এ হলো বাউবি শিক্ষক; যেনো পদার্থের শিক্ষক ইসলামের শিক্ষা আর আইনের শিক্ষক রোবটিক্স পড়ানোর মত অবস্থা। এ ধরনের আওয়ামী শিক্ষকদের নিয়োগের ক্ষেত্রে অনিয়মের বিষয়টি তদন্ত না করে বরং তাদের পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে। বিষয়টি উপর মহলে নজরে আসা দরকার।
চাকুরির শেষ সময়ে বড় ধরনের নিয়োগ বাণিজ্য করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মকর্তা ও শিক্ষাক।
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ট্রেজারার যিনি আবার স্কুল অব এগ্রিকালচার এন্ড রুরাল ডেভেলপমেন্ট এর ডীন পদও দখল করে আছেন। তিনি নিজ ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্কুল কমিটির অনুমোদন ব্যতিত উক্ত স্কুলে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের অনুমোদন দিয়েছেন। উল্লেখ্য, বাউবিতে কোনো শিক্ষক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার আগে সংশ্লিষ্ট স্কুলের কার্যনির্বাহী সভা আহবান করে তা অনুমোদন গ্রহন করতে হয়। রেজিস্ট্রারের মেয়েকে উক্ত স্কুলের মৃত্তিকা বিজ্ঞানের প্রভাষক পদে নিয়োগের বিষয়টি ট্রেজারারের সাথে টাকার বিনিময়ে সমঝোতা হয়। সে আলোকে স্কুল কমিটির অনুমোদন ব্যাতিত রেজিস্ট্রারও বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে। শুধু তাই নয় বর্তমান উপাচার্যের ব্যাক্তিগত সহকারীকে বাউবিতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে বাউবির অর্থ অপচয় করছেন।
বর্তমান উপাচার্য মহোদয় যোগদান করার পর বিগত ১৬ বছরের বৈষম্য নিরসনের জন্য পাঁচ ছয় মাস পূর্বে কমিটি গঠন করে দিলেও রেজিস্টারের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে তা এখনও বাস্তবায়ন হচ্ছে না। উপরন্তু বাগেরহাট হতে নির্বাচন করার প্রয়াস ব্যক্ত করার পর বর্তমান উপাচার্যের ব্যাক্তিগত সহকারীর প্রত্যক্ষ মদদে রেজিস্ট্রার, শাহরিয়ার শাহান, সোহেল মিলে দুর্নীতির মাধ্যমে উপাচার্যের জন্য নির্বাচনী তহবিল গঠন করছেন। তারই পুরস্কার স্বরূপ রেজিস্ট্রার শফিক তার পদে বহাল তবিয়ত তো রয়েছেনই বরংচ অবসরের পর পুনরায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের স্বপ্নও দেখছেন। যা দেখে মনে হয় ফ্যাসিবাদের কাধে সওয়ার হয়ে চলছে বাউবি।
উপরোক্ত বিষয়ে গুলো নিয়ে বাউবি রেজিষ্টার ড. মুহা. শফিকুল আলম কে জিজ্ঞাসা করার জন্য ফোনে বার বার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায় নি।
উপরোক্ত বিষয়াদি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মাননীয় উপাচার্য ও সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলকে অনুরোধ জানাচ্ছি।